learn-arabic-word-cloud-concept-on-white-background-P372E0

মুসলিম জীবনে আরবি ভাষার গুরুত্ব

-মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ

একজন মুসলমানের জীবনে আরবি ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআন ও সুন্নাহ আরবি ভাষায় বর্ণিত হওয়ায় এর গুরুত্ব সর্বকালে প্রায় সমান। আরবি ভাষা ইসলামী জ্ঞানচর্চা ও মুসলিম সমাজ-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমিই আরবি ভাষায় কোরআন অবতরণ করেছি, যাতে তোমরা উপলব্ধি করতে পারো। (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ২)

আরবি ভাষার চর্চা : হিজরি প্রথম শতাব্দীতে আরব-অনারবদের জীবনধারায় সংমিশ্রণ ও আরবি ভাষার বিধিবদ্ধ নিয়ম না থাকায় আরবি বিশুদ্ধ ভাষা চর্চা এবং কোরআনের নিগূঢ় রহস্য উপলব্ধি করা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। মূলত তখন থেকে প্রাতিষ্ঠানিক আরবি চর্চা শুরু হয়। সমাজবিজ্ঞানী আল্লামা ইবনে খালদুন (রহ.) সে সময়ের প্রেক্ষাপটের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘ইসলাম আগমনের পর আরবের অনেকে হেজাজ ছেড়ে অনারবদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করে। ফলে নবাগত আরবদের কথা শুনতে থাকায় প্রকৃত আরবদের শ্রবণশক্তিতে পরিবর্তন ঘটে। অথচ শ্রবণশক্তি ভাষা শেখার অন্যতম একটি উপকরণ। তখন বিজ্ঞজনরা ভাবলেন, এমন অবস্থা দীর্ঘ হতে থাকলে আরবদের শ্রবণশক্তি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। এতে কোরআন ও হাদিস বোঝাও কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে তাঁরা নিজেদের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে ভাষা শেখার মূলনীতি প্রণয়ন করেন।

বিভিন্ন নিয়ম-নীতির আলোকে ভাষার সব শব্দ ও বাক্যকে অন্তর্ভুক্ত করে নেন।’ (আল মুকাাদ্দিমা, পৃষ্ঠা ৪২৬)

পৃথিবীর যেকোনো ভাষার প্রধানত তিনটি বৈশিষ্ট্য। তা চিন্তাজগতের প্রথম সিঁড়ি, জ্ঞানজগতের আধার এবং যোগাযোগ, ভাষণ-বক্তব্য ও আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আরবি ভাষায় ওহি অবতরণ করায় সব ভাষার মধ্যে আরবি এক অনন্য মর্যাদার অধিকারী হয়।

সুস্পষ্টতায় আরবি ভাষা অনন্য : আরবি ভাষায় সহজে পুরোপুরি সুস্পষ্ট ভাব বর্ণনা করা যায়।

আরবি ভাষার এ বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি রয়েছে পবিত্র কোরআনেও। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় আমি তা অবতরণ করেছি।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ১৯৫)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আবুল হুসাইন আহমদ বিন ফারেস (মৃত্যু ৩৯৫ হি.) বলেন, “আল্লাহ তাআলা কোরআনকে ‘বয়ান’ বা সুস্পষ্ট শব্দ দিয়ে অভিহিত করেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, অন্য ভাষায় এ বৈশিষ্ট্য নেই এবং মান ও মর্যাদায় আরবি ভাষা সব ভাষার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।” (আস সাহেব ফি ফিকহিল লুগাহ : ৪/১)

কোরআন ও সুন্নাহ বোঝার প্রধান মাধ্যম : কোরআন ও সুন্নাহ বোঝার চাবি হিসেবে আরবি ভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নিগূঢ় রহস্য উদঘাটন ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব উপলব্ধিতে আরবি অদ্বিতীয় মাধ্যম। এ জন্য যুগে যুগে আলেমরা আরবি শেখার প্রতি উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা আরবি ভাষা শেখো। তা তোমাদের দ্বিনের অংশ।’ (মাসবুকুজ জাহাব ফি ফাজলিল আরব ওয়া শারফুল ইলমি আলা শারফিন নাসবি : ১/৯)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা আরবি ভাষায় কোরআন অবতরণ করেছেন। আর প্রিয় নবী (সা.)-কে আরবি ভাষায় কোরআন ও সুন্নাহ প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। দ্বিনের প্রথম অনুসারীরা ছিল আরবিভাষী। তাই দ্বিনের গভীর জ্ঞানার্জনের জন্য এই ভাষা আয়ত্তের কোনো বিকল্প নেই। অতএব, আরবি চর্চা করা দ্বিনেরই অংশ ও দ্বিনের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া, ৮/৩৪৩)

আরবি ভাষায় ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি বলেন, ‘আমাকে ফিকহের কোনো মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে আমি নাহুর নিয়ম দিয়ে এর উত্তর দিতাম।’ (শাজারাতুজ জাহাব, ইবনে ইমাদ আল হানবালি, ২৩১)

শাফেয়ি (রহ.) আরো বলেন, ‘আরবি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জনের পেছনে আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল ফিকাহ চর্চায় বিশেষ মনোযোগী হওয়া।’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা, জাহাবি, ১৭৫) তিনি আরো বলেন, ‘নাহু বা আরবি ব্যাকরণে গভীর পাণ্ডিত্য লাভ করলে তার জন্য সব ইলম অর্জন সহজ হয়ে যাবে।’

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

জনপ্রিয় ব্লগ

কুরআন

আমার হিফজ-যাত্রা

শুরু করার আগে আল্লাহর দেওয়া তাওফীকে আলহামদুলিল্লাহ আমার হিফজের সবক শেষ হয়েছে। আল্লাহর অনেক শুকরিয়া আদায় করছি। পরিচিত অনেক আপুদের

পুরোটা পড়ুন