রমজানকে বলা হয় কুরআনের মাস। কারণ এই মাসে কুরআন দুনিয়ার বুকে এসেছে। কুরআনের ছোঁয়া পাওয়ার কারণেই এই মাস অন্য মাসগুলোর তুলনায় অধিক সম্মানিত ও ফজিলতপূর্ণ। কুরআনের ছোঁয়া যেখানেই লাগে, সেটাই মর্যাদাপূর্ণ হয়ে যায়। একটা টুকরো কাপড়ের কথাই ধরুন। যেটা দিয়ে পায়ের মোজা বানানো যেত। কিংবা এরচে আরও হীন কোন কাজে একে ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এই কাপড়ের টুকরাটাই যখন কুরআনের গিলাফ হয়ে যায়, কুরআনের ছোঁয়া পায় তখন এটি আর অন্য দশটি সাধারণ কাপড়ের মত থাকে না। একে আলাদাভাবে সম্মান করতে হয়। কুরআনটা কেমন যেন এক পরশ পাথর। যেই জিনিসই এর সংস্পর্শে আসে, সেটাই সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ হয়ে যায়।
নিজেকে সম্মানিত আর মর্যাদাপূর্ণ করতে চাইলে কুরআনের সংস্পর্শে আসার কোন বিকল্প নেই। এটি সবচে সহজ ও সরল পথ। বিশেষত রমজান মাস যেহেতু কুরআনের মাস, তাই এই মাসে অবশ্যই শত ব্যস্ততা থাকলেও এর ভেতর দিয়েই কুরআনের কাছে আসা উচিত। কিছু সময়ের জন্য কুরআনকে আপন করে নেওয়া উচিত। যেন কুরআনের সৌম্য-কান্তিময় দ্যুতি জীবনকে দীপ্তিময় করে রাখে।
যারা চাকুরীজীবী, সারাদিনের কর্মব্যস্ততার ভেতর দিয়েও তারা সহজে কুরআনের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে পারেন। এর জন্য দরকার কিছু সচেতন পদক্ষেপের। তারচে বড় কথা, এর জন্য নিজের প্রবল ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকা। এটি যদি কারো মধ্যে থাকে, সে নিজেই রাস্তা তৈরি করে নিতে পারে। তবুও আমি সেই রাস্তা তৈরিতে কিছু পরামর্শ দেই।
প্রথমেই মাথা থেকে এই ভাবনা ফেলে দিতে হবে যে, কুরআন পড়ার জন্য আলাদা সময় বের করা জরুরী। এই একটা ভাবনার উৎপাটন কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়াকে অনেকাংশে সহজ করে দেয়। বহু মানুষ শুধু এই একটি ভাবনার কারণে কুরআনের সাথে তেমন সখ্যতা গড়ে তুলতে পারে না। যেহেতু আলাদাভাবে সময় বের করার মত অবসর সে খুব কমই পায়। তাই প্রথমেই এই ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
এবার কাজকর্মের ভেতর দিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সময়গুলো খুঁজে বের করুন, যখন আপনি অন্য কিছু করছেন না। যেমন ধরুন, অফিসে যাওয়ার জন্য গড়িতে বা রিকশায় চড়ে বসেছেন। অফিসে পৌঁছতে প্রায় আধা ঘন্টা এক ঘন্টা লাগবে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে এপ থেকে দেখে দেখে কুরআন পড়া শুরু করতে পারেন। অফিস পৌঁছা অব্দি অনেক পৃষ্ঠা আপনার পড়া হয়ে যাবে। আলাদা কোন সময় বের করা ছাড়াই ক্ষুদ্র এই কর্মহীন সময়টুকুকে কাজে লাগিয়ে বেশ অনেকটুকু তিলাওয়াত হয়ে গেল। অফিস থেকে ফেরার পথে সম্ভব হলে একই কাজ করুন। যাত্রাপথে অহেতুক গল্প-গুজব বা মোবাইলের স্ক্রীন স্ক্রলিং না করে এভাবে সময়টুকুকে সম্পদে পরিণত করে নিন।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আমাদের পড়া হয়ই। বিশেষত রমজান মাসে অনিয়িমত মুসুল্লিও নিয়মিত হয়ে যায়। সালাত শুরু হওয়ার পাঁচ-দশ মিনিট আগে মসজিদে চলে আসুন। প্রতি সালাতের আগে পরে কিছু তিলাওয়াত করুন। এতে আপনার কাজেও কোন প্রভাব পড়বে না। আলাদা করে সময় বের করার ঝক্কিতেও পড়তে হবে না। কিন্তু দিনশেষে দেখা যাবে পাঁচ ওয়াক্ত মিলে বেশ অনেকগুলো পৃষ্ঠা আপনার তিলাওয়াত করা হয়ে গেছে। অথচ এটা আপনার গায়েই লাগেনি।
আপনি যেই কাজ করছেন, সেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফ্রি সময়গুলো খুঁজে বের করুন। এটা কাজের ধরণ অনুপাতে একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। যেমন, আপনি যদি দোকানদার হয়ে থাকেন তাহলে যেই সময়টুকুতে কোন ক্রেতা আসছে না, তখন আপনি বসে বসে মাছি না মেরে ফোন থেকে কুরআন খুলে বসুন। কিংবা আপনি যদি কোন অফিসে কর্মরত হন, তবে কাজের মাঝে কোন সময়টুকুতে আপনি চাইলে দশ মিনিটের ব্রেক নিতে পারছেন রিল্যাক্স হওয়ার জন্য, সেটা নির্ধারণ করুন। তারপর কুরআনের পাতায় ডুব দিন। তিলাওয়াত আপনাকে দুনিয়ার ঝঞ্জাল থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি দিয়ে অনাবিল প্রশান্তির এক দুনিয়ায় অবগাহন করিয়ে মন-মনকে একদম তরতাজা করে দিবে। এভাবে সদিচ্ছা থাকলে নানানভাবেই আপনি নিজেকে কুরআনের জন্য নিবেদিত করতে পারেন।
সারাদিনে যদি কুরআনের কাছে যাওয়ার ফুরসৎ নাও হয়, অন্তত শেষ সুযোগ হিসেবে ঘুমের আগের সময়কে কাজে লাগান। আমরা যখন ঘুমাতে যাই, মোটামুটি ফ্রি হয়ে যাই এর আগে। হাতে কোন কাজ থাকলেও সেটা গুছিয়ে রাখি। এই সময়টাতেও আপনি ওজু করে এসে কিছু তিলাওয়াত করে তারপর ঘুমান। এতে করে আপনার ওজু করে ঘুমানোর ফজিলতও অর্জন হবে। আর কুরআন তিলাওয়াতের দ্বারা অর্জিত প্রশান্তি নিয়ে ঘুমানোর স্বাদ তো আছেই।