অনেক বাবা-মায়ের স্বপ্ন থাকে ছেলেকে হাফেজ বানাবেন। নিজেরা আল্লাহর কালামকে পরিপূর্ণ বুকে ধারণ না করতে পারার আফসোস কিছুটা হলেও ঘোচানোর চেষ্টা করে এর মাধ্যমে। কিন্তু নিজেরা হাফেজ না হওয়ার কারণে হিফজখানার খুঁটিনাটি অনেক কিছুই বুঝেন না। ফলে মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দিলেও ছেলেমেয়ের পড়ার মান যাচাইয়ের তেমন কোন সুযোগ থাকে না তাদের সামনে। এমন মা-বাবাদের জন্য ৮টি পরামর্শ।
১. হিফজের বিষয়টা নির্ভর করে একটা সন্তানের মেধার উপর। মেধার তারতম্য ভেদে সময় কমবেশ লাগতে পারে। সাধারণ মেধার একটা সন্তান যদি ঠিক মত পড়াশুনা করে তবে পুরো কুরআন হিফজ করতে ৩ বছর লাগে সাধারণত। আর মেধা একটু বেশি হলে দুই আড়াই বছর বা তারচে কম সময় লাগে। ক্ষেত্র বিশেষ কারো কারো বেলায় ৩ বছরের বেশি সময়ও লেগে যেতে পারে। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে সন্তানের মেধা, সুস্থতা ও যেখানে সে পড়ছে, সেখানকার পরিবেশের উপর।
২. হিফজের ক্ষেত্রে মাদ্রাসা কতটুকু ভাল এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, যেই উস্তাদের কাছে পড়ছে তিনি কতটুকু ভাল। অনেক সময় এমন হতে পারে, মাদরাসার বিভিন্ন সুনাম থাকা সত্ত্বেও আপনার সন্তান যেই উস্তাদের কাছে পড়ছে ব্যক্তিগতভাবে তিনি ভাল ও যোগ্য না হবার দরুন সন্তান পিছিয়ে পড়তে পারে বা তার পড়ালেখায় ঘাটতি আসতে পারে। কেননা হিফজ যতটা না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক বিষয়, তারচে বেশি ব্যক্তি-উস্তাদের পর্যবেক্ষণের বিষয়। একজন উস্তাযদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ আর আন্তরিকতার ভেতর দিয়েই মূলত হিফজখানার একজন ছাত্র বেড়ে উঠে।
৩. হিফজের ক্ষেত্রে মূল হলো পেছনের পড়া মনে রাখা। সামানে যত দ্রুতই আগাক না কেন, পেছনের পড়া যদি ইয়াদ (মনে) না থাকে, তাহলে ফলাফল শুন্য। এটা অনেকটা তলা খোলা ঝুড়ির মত হবে। তাই সন্তাদের পেছনের পরা কেমন ইয়াদ (মুখস্ত) আছে এটা বাবা-মা নিয়মিত যাচাই করুন। বাসায় এলে যে কয় পারা হিফজ করেছে সেগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশ্ন করুন। শুধু মুখস্ত তিলাওয়াত করে যেতে পারছে দেখেই শতভাগ সন্তুষ্ট হবেন না। বরং কোন পারার কত নং পৃষ্ঠা এবং কোন সূরার থেকে পড়ছে, সেটাও জিজ্ঞেস করুন। এগুলোও যদি বলতে পারে, তাহলে এবার সন্তুষ্ট হতে পারেন। এর মানে হলো, তার পেছনের সব পড়া পাকাপোক্ত আছে।
৪. হিফজখানার পড়ালেখার নিয়মনীতি ভাল মত জেনে নিন। সকালে সবক, তারপর সাতসবক, তারপর দুপুরে আমুখতা, দৈনিক তিলাওয়াত, বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক সবিনা, সবকের পারা শুনানো ইত্যাদি ঠিক মত সবকিছু হচ্ছে কিনা খোঁজ নিন। এই পরিভাষাগুলো দিয়ে কী বুঝানো হয় না জানলে ভালমত জেনে-বুঝে নিন। নইলে আপনি তার পড়ালেখা ঠিক মত হচ্ছে কিনা এটা বুঝতে ব্যর্থ হবেন।
৫. হাফেজী কুরআনের প্রতি পারা ২০ পৃষ্ঠা করে থাকে। শুধু ২৯ ও ৩০ একটু বেশি। প্রতিদিন সাধারণ মেধার একটা ছেলে ১ পৃষ্ঠা করে নতুন সবক শুনাতে পারে। সেই হিসেবে ২০ দিনে ১পারা। চলতি পারার নতুন সবকের পরে সেই পারার পেছেনের অংশটুকু শুনাতে হয়। এটাকে সাতসবক বলে। পেছনের অন্য পারার পড়া শুনানোকে আমুখতা বলে। আর চলতি পারা হিফজ শেষ হলে পুরো পারা বিনা ভুলে শুনাতে হয়। এটাকে সবকের পারা শুনানো বলে। সব মিলিয়ে গড়ে প্রতি মাসে নতুন ১ পারা মুখস্ত করার কথা। আর সপ্তাহান্তে বৃহস্পতিবার পেছনের পড়াগুলো ছাত্রভাইরা মিলে শুনাশুনি করা হয়। এটাকে সাপ্তাহিক সবিনা বলে।
৬. উপরের বিবরণ পড়ে নিশ্চয়ই বুঝেছেন, হিফজখানার একটা সন্তানকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। তাই তার ভাল খাওয়া-দাওয়া, প্রয়োজনীয় বিশ্রামের খোঁজখবর রাখুন। একঘেয়েমি দূর করতে ছুটির দিনগুলোকে কোথাও ঘুরতে/বেড়াতে নিয়ে যান। যাতে তার মন-ব্রেন ফ্রেশ হয়।
৭. হিফজখানার একজন শিক্ষকের প্রচুর পরিশ্রম হয়। তাদের ডিউটি থাকে ২৪ ঘন্টার এবং সারাদিন অনবরত। সেই তুলনায় তাদের বেতন থাকে অপ্রতুল। সাধ্য থাকলে তাদের মাঝেমাঝে হাদিয়া দিতে পারেন। এটি তাদের খুশির কারণ হবে। তাদের দুআ আপনার সন্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৮. আপনার বাসায় টিভি রাখবেন না। সন্তানকে নাচ-গান-মুভি ইত্যাদি গুনাহের আসবাব থেকে দূরে রাখুন। মোবাইল-ট্যাবে এসবে সে কী দেখছে নজরদারিতে রাখুন। কেননা যে চোখে আর অন্তরে গুনাহের স্বাদ ঢুকে পড়ে, সেখানে আর আল্লাহর কালাম ঢুকে না। মাঝে দিয়ে অনর্থক অনেকগুলো মাস বা বছর তার জীবন থেকে নাই হয়ে যাবে।
আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সবাইকে হাফেজ সন্তানের মা-বাবা হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
(আপনি নিজে যদি অনলাইনে হিফজ করতে চান তাহলে আমাদের একাডেমিতে ভর্তি হতে পারেন। শুধু ৩০ নং পারা হিফজ বা পুরো কুরআন হিফজ কিংবা আপনার সাধ্যে যতটুকু কুলায়, ততটুকু। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে)